জিতলেই সেমিফাইনাল, হারলেই বাদ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নিল ইংল্যান্ড।লঙ্কানরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেলেও পথ হারালো না ইংলিশরা। শেষ ওভারে গড়ানো ম্যাচে মাথা ঠাণ্ডা রেখে জয় নিশ্চিত করলেন বেন স্টোকস। এই জয়ে নিজেরা শেষ চার নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিদায়ঘণ্টাও বাজিয়ে দিল ইংলিশরা।

২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে লঙ্কানদের ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাটলারবাহিনী। শুরুতে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রানের মাঝারি সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৬ উইকেট হারালেও ২ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড।

৫ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘ওয়ান’-এর রানার্সআপ দল হিসেবে সেমিতে উঠল ইংলিশরা। সমান পয়েন্ট নিয়েও নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনাল খেলবে নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে শীর্ষ দুই দলের সমান পয়েন্ট নিয়েও নেট রানরেটে পিছিয়ে থাকায় সুপার টুয়েলভ পর্ব থেকেই বিদায় নিল অস্ট্রেলিয়া। এই গ্রুপের বাকি দলগুলোর বিদায় আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কা শেষ করল চারে থেকে।

জবাব দিতে নেমে দারুণ শুরু পায় ইংলিশরা। দুই ওপেনার জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস মিলেই তুলে ফেলেন ৭৫ রান। অধিনায়ক বাটলার ২৩ বলে ২৮ রান করে লঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে আউট হওয়ার পর অবশ্য দ্রুত আরও ২ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। হেলস ৩০ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ রান করে হাসারাঙ্গার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন।

এরপর হ্যারি ব্রুকসের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৪ রান। তাকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে ফেরান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিয়াম লিভিংস্টোনও (৪)। ১০৪ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়েও অবশ্য ভালো অবস্থানেই ছিল ইংল্যান্ড। বলের চেয়ে লক্ষ্য ছিল হাতেই। কিন্তু ১৫তম ওভারে অযথা শট খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন মঈন আলী (১)। ফলে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড।

শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ২৯ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ইংলিশদের সামনে। স্টোকস দায়িত্ব নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন। ১৬তম ওভারে তার এক বাউন্ডারিসহ আসে ৮ রান। পরের ওভারে আসে ৬ রান। ফলে শেষ ৩ ওভারে ১৫ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়। কিন্তু ১৮তম ওভারে রান তোলার চাপ সামলাতে না পেরে লাহিরু কুমারার বলের ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন কারান (৬)। ওই ওভারে আসে মাত্র ২ রান। খেলা ততক্ষণে জমে ওঠেছে।

শেষ ১২ বলে ১৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ১৯তম ওভারে ৮ রান তুলতে পারেন স্টোকস ও ওকস। শেষ ওভারে ৫ রান দরকার ছিল। প্রথম বলে ডাবল নেন স্টোকস। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ওকসকে স্ট্রাইকে পাঠান তিনি। তৃতীয় বলে ডট। চতুর্থ বলে ওকস বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন। ৩৬ বলে ২ চারে ৪৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন স্টোকস।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই পায় শ্রীলঙ্কা। বিনা উইকেট ৩৯ রান তোলার পর প্রথম উইকেট হারায় তারা। ১৪ বলে ১৮ রান করে আউট হন ওপেনার কুশল মেন্ডিস। এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে একপ্রান্তে ঝড় তুলতে থাকেন তিনি। কিন্তু ধনঞ্জয়ার সঙ্গে তার জুটি থামে দলীয় ৭২ রানে। ১১ বলের মোকাবিলায় ধনঞ্জয়া করেন মাত্র ৯ রান।

অন্যপ্রান্তে কেউ সেভাবে দাঁড়াতে না পারলেও নিশাঙ্কা তুলে নেন দারুণ এক ফিফটি। এর মাঝেই বিদায় নেন চারিথ আসালাঙ্কা (৮)। দলকে ১১৮ রানে রেখে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে ড্রেসিংরুমে ফেরেন নিশাঙ্কা। তার ব্যাট থেকে আসে ৪৫ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৬৭ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। এরপর বলার মতো রান আসে কেবল ভানুকা রাজাপক্ষের (২২) ব্যাট থেকে। অধিনায়ক শানাকা করেন মাত্র ৩ রান। এছাড়া শেষদিকে ৯ বলে ৯ রান করে রানআউট হয়ে ফেরেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।

বল হাতে ৩ উইকেট নেন ইংল্যান্ডের মার্ক উড। এছাড়া ১টি করে উইকেট নিয়েছেন বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস, স্যাম কারান এবং আদিল রশিদ।