- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

অবাধে ট্রাক্টর-লরি চালাতে দূর্গাপুরে হাজারো দিনমজুরের মানব বন্ধন

নেত্রকোণা প্রতিনিধি: সরকারের ঘোষিত শিথিলতা কার্যকর করতে নেত্রকোণা জেলার দূর্গাপুর উপজেলায় মানব বন্ধন করেছে খেটে খাওয়া হাজারো দিনমজুর শ্রমিক। তাদের দাবি, তারা ২৪ঘণ্টা কাজের সুযোগ চান। তারা ট্রাক্টর-লরি ২৪ঘণ্টা চালিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে চান। মানব বন্ধনের সময় তাদের প্লেকার্ডে লিখা ছিলো,

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামত শিথিলতা কার্যকর চাই।
আমরা মেহনতি শ্রমিকরা দিন আনি দিন খাই, আমাদের প্রান ভিক্ষা চাই ।
আমরা গরীবের সন্তানদের পেট ভরে তিন বেলা খাওয়াতে চাই ।
আমরা শ্রমিক, আমরা বাঁচতে চাই ।

সরেজমিনে জানা গেছে, দূর্গাপুর বালুমহাল গুলোতে হাজারো শ্রমিকের রুটিরুজি জড়িত। এরা মেহনতি দিনমজুর শ্রমিক। কেউ ড্রাইভার , কেউ হেলপার , কেউ লোডিং শ্রমিক , কেউ বেলচা শ্রমিক , টুকরি শ্রমিক , কেউ লাইনম্যান ,কেউ ডাইভারশন শ্রমিক, কেউ দৈনিক শ্রমিক । কেউ বালু পরিবহন করে । দু:খজনক হলেও নির্মম বাস্তবতা, উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরাও বর্তমান পরিস্থিতিতে উপায়ন্তর না দেখে অসহায়চিত্তে অংশীদারভিত্তিতে শ্রমজীবীর কাজ করছে । দিনরাত কাজ করলে অনেকের কর্মসংস্থান হয়, আয়-উপার্জনের একটি ব্যবস্থা হয় ।

তিন আলী নিবাসী লরি শ্রমিক সুলতান বলেন, আমরা দিনমজুর শ্রমিক। আমরা দিন আনি দিন খাই। আমরা যদি একটু বেশি সময় কাজ করতে পারি তাহলে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করার পথ সুগম হয়।

খড়শ গ্রামের অন্য এক দিনমজুর কালাম বলেন, করোনার কারণে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। আমরা সরকার তথা স্থানীয় প্রতিধিনিদের কাছে দাবি জানাই, তারা যেন আমাদের ব্যাপারে একটু ভাবেন। আমাদের দু:খ লাঘব করার সহায়ক হোন।

জানা গেছে, প্রশাসনের একটি রেজুলেশনে সকাল ৮ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত লরি চালানো বন্ধ আছে । ফলে দিনমজুর মানুষগুলো করোনা সংকটকালীন পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। বালুমহালের চুক্তি ও নীতিমালায় সময় নির্দিষ্ট করে যান চলাচলের বিধি নাই । এই রেজুলেশন হয়েছিলো, শিক্ষার্থীদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য। যেহেতু মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে তাই দিনমজুর শ্রমিকরা সর্বাক্ষণ তথা অবাধে কাজ করার দাবি জানিয়ে মানব বন্ধন করেছেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা জানান, লরি আসলে কৃষি কাজ করার জন্য হলেও শ্রমিকরা যেহেতু কাজ করছেন এবং আমাদের স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীর অনেক টাকা বিনিয়োগ এখানে রয়েছে তাই আমাদের জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৫টার পর থেকে লরি চলাচল করবে। এটিকে বন্ধ করার দাবি থাকলেও আমরা শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে, মালিকদের কথা চিন্তা করে বন্ধ করিনি। আর এগুলো অবাধ এবং নির্বিঘ্নে চলাচল করছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়ার আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা । অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার সকল শ্রেনী পেশার মানুষের জীবন বাঁচানোর তাগিদে জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করার লক্ষ্যে শিথিলতার পন্থা অবলম্বন করছে । সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে প্লেকার্ডে লিখেন, করোনাকালে বাঁচতে চাই, ২৪ ঘন্টা লরি ট্রাক্টর চালাতে চাই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়েক’শ উচ্চ শিক্ষিত যুবক চাকুরি হারিয়ে এই সেক্টরে কর্মসংস্হান পেয়ে তারা বর্তমানে স্বস্তিতে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৩ মার্চ সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে দ্বিতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত, তৃতীয় দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ও চতুর্থ দফায় ৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বর্ধিত করা হয়। এরপরও পরিস্থিতির উন্নত না হওয়ায় পঞ্চম দফায় ১৬ মে এবং সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি বৃদ্ধি করে সরকার।