- Bangladesher Shomoy | বাংলাদেশের সময়.কম - https://www.bangladeshershomoy.com -

অপরের মুখে হাসি ফোটানোর সওয়াব

ড. মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান আল-আরিফি : ব্যক্তিগত ইবাদতের চেয়েও সামাজিক ইবাদতের পরিধি অনেক বিস্তৃত। কোরআন ও হাদিসের বেশিরভাগ অংশজুড়েই রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করার তাগিদ। কারণ, ইসলাম সাম্য ও সামাজিকতার ধর্ম। মানবতা, মানবিকতা ও মানবকল্যাণ এ ধর্মের প্রাণ। বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-কে গোটা বিশ্বের হিতাকাক্সক্ষীরূপে পাঠানো হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)। আমাদের সময়.কম।

এই রহমত ও করুণা পৃথিবীর সব মুসলিম-অমুসলিম, প্রাণিজগৎ, উদ্ভিদজগৎ এমনকি জড় পদার্থের জন্য।

একবার জনৈক ইহুদি মহানবী (সা.)-কে খাবারের দাওয়াত দিয়েছিল। প্রিয় নবী (সা.) তাকে খুশি করার জন্য তার ডাকে সাড়া দিলেন। প্রিয় নবী (সা.)-এর মনে এই চিন্তা উদ্রেক হয়নি যে, আমি কাফিরের ঘরে যাব না। তিনি এটা ভাবেননি যে একজন ইহুদিকে খুশি করলেই কী বা আসে যায়।

প্রিয় নবী (সা.) তুচ্ছ প্রাণীকেও খুশি করতে তৎপর ছিলেন। একবার তিনি এমন দুই লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যারা দুটি বাচ্চা উটের ওপর সওয়ার হয়ে কথা বলছিল। তখন প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘প্রাণীকে চেয়ার হিসেবে গ্রহণ কোরো না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫৬৫০)

অন্যকে খুশি করার একটি পন্থা হলো সীমারেখার মধ্যে থেকে কৌতুক-রসিকতা করা।

প্রিয় নবী (সা.) কখনো সহমহির্মতার জন্য হাসি-ঠাট্টা করতেন। কখনো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে, কখনো দাওয়াতি কাজ হিসেবে, কখনো বিপদগ্রস্তকে সহমর্মিতা জানাতে, কখনো বহির্বিশ্বে ইসলামি সংস্কৃতি প্রচারের নিমিত্ত। এগুলো সবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আমরা অন্যকে আনন্দদানের জন্য অনেক কিছু করতে পারি। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আনন্দ-ফুর্তি, আন্তরিকতা মানুষের হৃদয়কে আকর্ষণ করে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহই হাসান এবং কাঁদান।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ৪৩)

ইসলাম হাসি ও আনন্দে পরিপূর্ণ একটি ধর্ম। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের সামনে মুচকি হাসা সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা কোনো ভালো কাজকে ছোট মনে করবে না, যদিও তা অন্যের সঙ্গে মুচকি হাসা হোক না কেন।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ২৬২৬)

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘উত্তম আমল হলো, তোমার মুসলিম ভাইকে খুশি করা। তার ঋণ আদায় করে দেওয়া। তার প্রয়োজন পূরণ করা এবং তার বিপদ দূর করা।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস : ৭২৭৪)

সাহাবায়ে কেরামরা কিছু সময় মহানবী (সা.)-এর দরবারে বসতেন। আবার তাদের দৈনন্দিন জীবনে ফিরে যেতেন। তাই প্রিয় নবী (সা.) বুঝতেন, কাউকে একই অবস্থায় সর্বদা চাপিয়ে রাখা সংগত নয়।

হানজালা (রা.) একবার এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! হানজালা মুনাফিক হয়ে গেছে।’ প্রিয়নবী (সা.) বলেন, কী হয়েছে? তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যখন আমরা আপনার দরবারে থাকি তখন আমাদের হৃদয় বিগলিত হয়। এমনকি আমরা যেন জান্নাত-জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখছি। কিন্তু এখান থেকে ফিরে সাংসারিক জীবনের মায়াজালে লিপ্ত হয়ে যাই। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে হাস্য-রসিকতায় লিপ্ত হই। তখন অনেক কিছুই ভুলে যাই।’ তখন প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘কিছু সময় ইবাদতে আর কিছু সময় আত্মিক বিনোদনে ব্যয় করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১৪)

এখানেই ইসলামের সৌন্দর্য। অন্যকে আনন্দ দেওয়া ও খুশি করার জন্য অনেক ইবাদতের প্রবর্তন করা হয়েছে। যেমন মৃত পরিবারকে সান্ত¡না প্রদান, রোগীর সেবা-শুশ্রƒষা, প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেওয়া ইত্যাদি। আমরা মৃতকে জীবিত করতে পারব না, কিন্তু তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে পারি। যেন আল্লাহতায়ালা তাদের দুঃখ-যন্ত্রণা লাঘব করেন।

অন্যকে খুশি করার কিছু সাধারণ পদ্ধতি

১. হাদিয়া উপহার দেওয়া। হাদিয়া অনেক দামি হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনি যদি কোনো বন্ধুর বাসায় যান, আর তার সন্তানাদি থাকে, তাহলে কিছু খাবার ও খেলনা নিয়ে যান। এটা তাদের আনন্দিত করবে।

২. মানুষের সঙ্গে মুচকি হেসে কথা বলুন।

৩. অন্যের প্রয়োজন পূরণ করুন।

৪. উত্তম কথা সদকাস্বরূপ। তাই উত্তম কথা বলুন।

৫. বন্ধুবান্ধবের খোঁজখবর নিন।

৬. ইসলামি ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে অতীতে মুসলিম সমাজে মসজিদের পাশে অনেক (ওয়াক্ফকৃত) আওকাফ তথা সহায়তাকেন্দ্র (কেয়ার সেন্টার) ছিল। সেখানে শুধু অসুস্থ ও গরিবদের জন্য নামে ওয়াক্ফকৃত বিশেষ সেন্টার ছিল। সেখানে নিয়মিত কিছু কারি ও সাধারণ ধর্মীয় বই পাঠক থাকতেন। তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারিত ছিল। তারা অসুস্থ ব্যক্তির আপনজন ছিলেন না। তাদের কাজ ছিল অসুস্থ ব্যক্তির সামনে এশার পর থেকে ফজর পর্যন্ত এবং দিনের অবসর সময়ে শুধু কোরআন তেলাওয়াত বা অন্যান্য ধর্মীয় কিতাবাদি পাঠ করা। উদ্দেশ্য হচ্ছে, যেন রোগীরা সারা রাত কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পারেন। বিছানায় শায়িত অবস্থায়ও ধর্মীয় পুস্তকপঠন শুনে শুনে ইসলামি জ্ঞানার্জন করতে পারেন। ফলে রোগীরা রোগযন্ত্রণা ও বিষন্নতার কথা ভুলে যেতেন এবং আনন্দ উপভোগ করতেন।

৭. বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়িল, জিকির-আজকার শিক্ষা দিয়ে অন্যকে খুশি করা যায়।